আমেরিকা , রবিবার, ২৫ মে ২০২৫ , ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ডেট্রয়েটে উইকেন্ড ঝড়! টেকনো সঙ্গীতের ঝংকারে মুখরিত ডেট্রয়েট শহর নিরপেক্ষতা সংকটে বিতর্কিত উপদেষ্টা, অপসারণ দাবি বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে আলোচনা সন্ধ্যায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা ডেট্রয়েটে শাকিরার জাদুকরী সুরের রাত হ্যামট্রাম্যাকে এফবিআই অভিযান : দৃশ্যমান প্রমাণ না থাকলেও চলছে তদন্ত 'অবৈধতা ফাঁস করায় বরখাস্তের চেষ্টা' হ্যামট্রাম্যাক সিটি ম্যানেজারের বিস্ফোরক পোস্ট ড্রাইভ বাই শুটিংয়ে আহত ডেট্রয়েট র‍্যাপার স্কিলা বেবি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন: উপদেষ্টা রিজওয়ানা প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না, জানালেন বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না: সেনাবাহিনী টিকবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে নিঃশব্দে, মিশিগানে স্বাস্থ্য সতর্কতা দীর্ঘদিনের প্রিয় ডাক পরিবহনকারী পার্ল টেলরকে হৃদয়স্পর্শী বিদায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ককে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনিক ছুটিতে হ্যামট্রাম্যাক পুলিশের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা, চলছে তদন্ত ছাত্র উপদেষ্টারা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না : ইশরাক ইভি বাজারে ‘নিখুঁত ঝড়’, কিন্তু জিএম দেখছে সম্ভাবনা ইশরাকের শপথের পথে শেষ বাঁধা উতরে গেলো ওয়াশিংটন ডিসিতে গুলি, নিহত ইজরায়েল দূতাবাসের ২ কর্মী

নজরুল -কাব্যে শিল্প  

  • আপলোড সময় : ২৫-০৫-২০২৫ ০১:০২:২১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৫-০৫-২০২৫ ০১:০২:২১ পূর্বাহ্ন
নজরুল -কাব্যে শিল্প  
রবি -করোজ্জ্বল বাংলা সাহিত্যের ললিত কোমল অঙ্গনে যিনি প্রথম বিপ্লব, বিদ্রোহ আর বিক্ষোভের তূর্য নিনাদ শুনিয়েছেন, তাঁর নাম কাজী নজরুল ইসলাম ।  
দীপ্ত প্রাণের উচ্চকিত মাদল বাজিয়ে অগ্নিবীণা হাতে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তাঁর উজ্জ্বল প্রবেশ। বিদ্রোহী কবি হিসাবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্বতন্ত্র মূল্য বিদ্যমান। 
বিদ্রোহের অগ্নি- শপথে বলীয়ান কবি যখন ঘোষণা করেন, 
"আমি বিদ্রোহী ভৃগু ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন, 
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন "। (বিদ্রোহী কবিতা ) তখন এই নবতর ব্যঞ্জনার মাধ্যমে বিদ্রোহের এক অভিনব চিত্র দিব্য রাগে প্রদীপ্ত হয়ে ওঠে। কেবল বিদ্রোহের উচ্চকণ্ঠের মাধ্যমেই তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেননি। এর বাইরে নানা দিক থেকেই নজরুলের অবদান আপন আলোয় সমুজ্জ্বল। তাঁর সৃষ্টিসম্ভার বহুবিচিত্র ধারায় উৎসারিত হয়ে বাংলা সাহিত্যকে বেগবান করেছে, ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছে। বিদ্রোহ, প্রেম, মানবিকতা, তারুণ্য, প্রকৃতি, অসাম্প্রদায়িকতা, অধ্যাত্মবাদ ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে নজরুলের রচনা আপন স্বাতন্ত্র্যে বিকশিত । কেবল বিষয়বৈচিত্র্যেই নয় , নজরুল একজন সার্থক শিল্প- স্রষ্টা। শিল্পের হৃদয়রঞ্জক আয়োজনে তাঁর সাহিত্য দীপ্র।  
এবার আমরা নজরুল - কাব্যের ভাষা, শব্দ, ছন্দ আর অলংকার বিষয়ে আলোকপাত করার মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করব। 

নজরুলের ভাষা লক্ষণীয় পরিমাণে বেগবান, শাণিত, সংগ্রামী, বলিষ্ঠ আর অফুরন্ত প্রাণবন্যায় উচ্চকিত। তাঁর পূর্বে ঠিক এ ধরনের তেজোদীপ্ত ভাষার সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। জগতের সব অন্যায়, অবিচার, অসত্য, অসাম্য আর শোষণের বিরুদ্ধে নজরুল ছিলেন সদাসর্বদা নির্ভীক। জ্বালাময়ী ভাষায় তিনি এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর বিদ্রোহ সত্য, সুন্দর আর কল্যাণ প্রতিষ্ঠার দুর্দমনীয় প্রত্যাশায় দুর্বার। 
স্বাধীনতা আন্দোলনের যুগে তিনি মানুষকে সবার উপরে ঠাঁই দিয়েছেন। নিবিড় করে নির্যাতিত মানুষের বন্ধন মুক্তির পথ আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। শোষিত, নির্যাতিত, উৎপীড়িত, অবহেলিত দুখি মানুষের বিদ্রোহী মনের জ্বালা নজরুল কাব্যে আপন আলোয় দেদীপ্যমান। এই বিপ্লবাত্মক সমাজ চেতনা কবিকে সব সময় অশান্ত অস্থির করছে। তিনি মনের সবটুকু দরদ নিয়ে নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই অশান্ত, দুর্বিনীত মননের প্রকাশ ঘটেছে ভাবানুসারী বলিষ্ঠ ভাষার আশ্রয়ে
" আমি অনিয়ম উশৃংঙ্খল 
আমি দলে যাই যত বন্ধন যত নিয়ম কানুন শৃংঙ্খল।  
আমি মানিনাকো কোন আইন 
আমি ভরা তরী করি ভরাডুবি আমি টর্পেডো ভীম ভাসমান মাইন ।" (বিদ্রোহী কবিতা ) 
অন্যত্র "আমি বিধির বিধান ভাঙিয়াছি আমি এমনি শক্তিমান
মম চরণের তলে মরণের মার খেয়ে মরে ভগবান!" (অভিশাপ কবিতা ) 
 
নজরুল সমাজ সচেতন কবি। তাঁর 'বিষের বাঁশি,' 'সর্বহারা' 'ভাঙার গান প্রভৃতি গ্রন্থে সমাজের নানা অসঙ্গতি র প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠেছে। শ্বাসরুদ্ধকর এক অসহনীয় পরিস্থিতির নাগপাশে সমাজ বন্দী। এসব প্রত্যক্ষ করে কবি প্রতিবাদে উচ্চকণ্ঠ । এই ম্রিয়মাণ সমাজের ভয়াবহ সমস্যা কবিকে অশান্ত করে তুলেছে। চারদিক থেকে ব্যক্তি বিকাশের পথ তখন রুদ্ধ । এ বন্দীত্বের অসহায় যন্ত্রণার ছায়া পড়েছে নজরুলের বিভিন্ন কবিতায়,কাব্যে । উত্তেজনা উল্লাস, আর সংগ্রামশীলতার সুদক্ষ রূপকার কবি সমাজ বিষয়ক কবিতায় জ্বালাময়ী ভাবের সাথে সঙ্গতি রেখে বলিষ্ঠ এবং উদ্দীপ্ত ভাষা ব্যবহারে সচেষ্ট ছিলেন । _
"আসিতেছে শুভ দিন । 
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।  
হাতুড়ি, শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙ্গিলো যারা পাহাড় 
পাহাড় -কাটা সে পথের দুই পাশে পড়িয়া যাদের হাড়। 
তারাই মানুষ তারাই দেবতা গাহি তাহাদের গান 
তাদের ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান ।!" (কুলি মজুর কবিতা )
এরকম ভাষার বহু উদাহরণ নজরুল কাব্যে বিদ্যমান। যা শাণিত, বলিষ্ঠ, তেজোময়, সংগ্রামশীল ওঅগ্নিগর্ভ । এককথায় আপন স্বকীয়তায় নজরুলের ভাষার স্বতন্ত্র মূল্য বিদ্যমান। 
 
নজরুলের শব্দ ভাণ্ডারও অত্যন্ত সমৃদ্ধ । হিন্দু-মুসলিম ঐতিহ্য বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন। আর আরবি-ফার্সি ভাষা বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষ ছিলেন । নজরুল তৎসম, অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি-বিদেশি সকল প্রকার শব্দ - ফুলে তাঁর কাব্যের বাগান সাজিয়েছেন।  
ইসলামের সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করতে গিয়ে কবি আরবি-ফারসি শব্দের নৃত্য চপল তরঙ্গদোলায় ঁতার দরদি মনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন_ "দুজনার হবে বুলন্দ নসিব লাখে লাখে হবে বদনসিব 
 এ নহে বিধান ইসলামের।" (ঈদ মোবারক কবিতায় ফারসি শব্দ)  

"আল্লা রাসুল মুখে বলে তাঁর ক্ষমা পায়নিকো এরা
দেখেছে শুষ্ক দামেস্কো শুধু, দেখে নি কাবা ও হেরা। (মরুভাস্কর কবিতায় আরবি শব্দ।)

রস সৃষ্টির প্রয়োজনে কবি ইংরেজি ও আটপৌরে গ্রাম্য শব্দ ব্যবহার করে আপন কৃতিত্বের পরিচয় সুদৃঢ় করেছেন। যেমন,
"১আমি সাইক্লোন আমি ধ্বংস"। ( বিদ্রোহী কবিতায় ইংরেজি শব্দ) 
২ "তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা ভ্যালা হল দেখি ল্যাঠা " (মানুষ কবিতায় গ্রাম্য শব্দ)  

এসবের পাশাপাশি ছন্দ নির্মাণেও নজরুলের কৃতিত্ব অপরিসীম। 
তিনি যৌগিক, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত, সংস্কৃত প্রভৃতি ছন্দে কাব্য দেহ নির্মাণ করেছেন। ব্যথা -দীর্ণ বিরহী হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি অঙ্কনে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ সৃষ্টি করেছেন। শান্ত রস,ধীর লয় ও বিলম্বিত গতির এ ছন্দ বিরহ বিধুর ভাব পরিমণ্ডল সৃষ্টিতে অনন্য। 
যেমন_
"তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না
 কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙ্গিবনা। 
নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ। ' (বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি কবিতা )  
দ্রুত লয়ের চটুল ষড়বৃত্ত ছন্দে নজরুল হারিয়ে যাওয়া প্রিয়াকে স্মরণ করেছেন । ঁতার আর্ত হাহাকার_ "হারিয়ে গেছো অন্ধকারে পাইনি খুঁজে আর
 আজকে তোমার আমার মাঝে সপ্ত পারাবার । " (চৈতী হাওয়া কবিতা) 
এছাড়া আরবি ছন্দে নজরুল আপন শিল্প - দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। নির্ঝর 'কাব্যগ্রন্থ এর দীপ্ত উদাহরণ । আরবি মোতাকারিব ছন্দে লিখেছেন, "কানের দুল
খোপায় ফুল
দোদুল দুল ।  
দোদুল দুল। "
(দোদুল দুল কবিতা) 
নজরুল তাঁর কাব্য দেহকে নানারকম অলংকারে সাজিয়েছেন । শব্দালঙ্কার এবং অর্থালংকার এই উভয় অলংকার নির্মাণে নজরুলের -শিল্প কৃতিত্ব আপন স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল।  
যেমন_১ "আমি বয়ে যাই বয়ে যাই আমি কুল কুল কুল কুল। "(ধন্যুক্তি অলংকার, চক্রবাক কবিতা) 
২ "উঠানে তোর শূন্য মরাই মরার মতন। পড়ে। "(উপমা অলংকার, উঠরে চাষী কবিতা।) 

৩ "মেখলা ছিঁড়ি পাগলী মেয়ে বিজলী বালা নাচায় হীরের চুড়ি।"( রূপক অলংকার, নিরুদ্দেশের যাত্রী কবিতা) 
  
৪ "দাঁড়িয়ে দূরে ডাকছে মাটি
দুলিয়ে তরু -কর"। (সমাসোক্তি অলংকার, সর্বহারা কবিতা) 

এরকম বহু উদাহরণ নজরুল কাব্যে দীপ্র হয়ে আছে। 
সবশেষে আমরা বলব ভাবানুগামী ভাষা, শব্দের শিল্প সুষম কারুকাজ, ছন্দের মূর্ছনা, অলংকারের দীপ্তি ইত্যাদির শিল্প -সফল সমন্বয়ে নজরুল কুশলী শিল্পী মনের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর শিল্প আপন আলোয় বলিষ্ঠ এবং প্রাণবান।
এ প্রসঙ্গে কবি বুদ্ধদেব বসুর মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য । তিনি বলেন," বাংলা কাব্যের ইতিহাসে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পরে সবচেয়ে বড় কবিত্বশক্তি নজরুল ইসলামের । "

তথ্যসূত্র
১. নজরুল চরিত মানস ড. সুশীল কুমার গুপ্ত, কলকাতা, ১৪০৩। 
২. বাংলা সাহিত্যে নজরুল, আজহার উদ্দিন খান, কলকাতা, ১৯৯৭। 
৩. সমালোচনা সংগ্রহ, অধ্যাপক মাহবুবুল আলম সম্পাদিত, ঢাকা, ২০০১। 

লেখক : জাহান আরা খাতুন 
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ 
হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, হবিগঞ্জ। 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
বোয়ালখালীতে লায়ন্স ক্লাব চিটাগাং কর্ণফুলী এলিটের মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত 

বোয়ালখালীতে লায়ন্স ক্লাব চিটাগাং কর্ণফুলী এলিটের মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত